শবে বরাত কি? আরবি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য। এই দুইটি শব্দ মিলিয়ে গঠিত শবে বরাত-এর অর্থ ‘ভাগ্য রজনী’ বা ‘ভাগ্যের রাত’ বা ‘ভাগ্য নির্ধারণের রাত’। আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকেই শবে বরাত হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ও তাদের গুনাহ মাপের উদ্দেশ্যে এ রাতে মুসলমানগণ এবাদত বন্দেগী করে থাকে।
তবে বর্তমানে সমাজে পবিত্র শবে বরাত নিয়ে কিছু সামাজিক কুসংস্কার রয়েছে। যে কাজগুলো করা একদমই উচিত নয়। তাই পবিত্র শবে বরাত পালনের নিয়ম সম্পর্কে সকল মুমিন মুসলমানদেরকে জানতে হবে। ইন্টারনেটে অনেকেই শবে বরাত পালনে নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাই আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে পবিত্র শবে বরাত পালনের ক্ষেত্রে কি কি কাজ করতে হবে ও কি কি কাজ বর্জন করতে হবে তা জানাবো।
সুতরাং আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন এবং পবিত্র শবে বরাত পালন করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমি জানাবো কিভাবে আপনি পবিত্র শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে পারেন ও নফল রোজা রাখতে পারেন। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
শবে বরাত পালনের নিয়ম ২০২৪
পবিত্র শবে বরাত পালনের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। পবিত্র কুরআনে পবিত্র শবে বরাত পালনের বিষয়ে কোনো কথা উল্লেখ করা হয় নাই। তবে পবিত্র শাবান মাসে প্রিয় নবী বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণ পবিত্র সাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারারাত ইবাদত বন্দুকের মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। পরের দিন অনেকেই নফল রোজা রাখে। যেহেতু শবে বরাত পালনের নির্দিষ্ট কোন বিধান নেই তাই এ রাত্রি পালন করার আগে অবশ্যই করণীয় ও বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে জানতে হবে।
মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং আপনার গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে আপনি সারারাত ইবাদত বন্দেগী করতে পারেন। তবে আপনার ইবাদত যাতে এরকম না হয় সারারাত নামাজ পড়লেন কিন্তু ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করলেন না। শবে বরাত পালনের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে নিচের দেখানো নিয়ম গুলি দেখতে পারেন।
শবে বরাতে করণীয়
বিভিন্ন হাদিস থেকে পবিত্র শাবান মাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। শাবান মাসের মধ্যে সময়ে পবিত্র শবে বরাত পালন করা হয়। এ রাতে গোসল করা মুস্তাহাব, গোসলের পর দুই রাকাত তাহিয়াতুল অজুর নামাজ, তারপর দুই রাকাতের নিয়তে প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা ও সুরা ইখলাছ সহকারে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। নফল নামাজের পাশাপাশি আপনি চাইলে পরের দিন নফল রোজা রাখতে পারেন। কারণ রোজা রেখে ইবাদত করা অবশ্যই উত্তম। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করতে হবে। এছাড়াও আমাদেরকে আমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
শবে বরাতে বর্জনীয় কাজ
শবেবরাতকে ঘিরে অনেক মুসল্লিগঞ্জ যেমন এবাদত বন্দেগি করে থাকেন তেমনি আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক আছে যারা এই রাতে বিভিন্ন বিধর্মীদের মত আচরণ করে থাকে। পবিত্র শবে বরাতের যেরকম নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয় ঠিক তেমনি কিছু কাজ থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে খামাখা ঘোরাঘুরি করা, অযাচিত আনন্দ-উল্লাস করা, বেহুদা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা, অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো, হালুয়া-রুটি বা খাবারদাবারের পেছনে বেশি সময় নষ্ট করা, ইবাদতে উদাসীনতা সমীচীন নয়। সুতরাং শবে বরাতের বর্জনীয় কাজ থেকে দূরে থেকে মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদেরকে এবাদত বন্দেগী করতে হবে।
শবে বরাতে যেসব কাজ করা যাবে না
পবিত্র শবে বরাতের রাতে যে শুধু মহান আল্লাহতালা সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এরকম নয়। ভুলভাবে শবে বরাত পালন করলে মহান আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্টও হতে পারেন। সুতরাং আপনাকে শবে বরাত নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা যাবে না। সঠিক নিয়মে শবে বরাত পালন করে মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।
শবে বরাতে নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়া। এই ধরনের কোনো আমলের প্রমাণ হাদিস শরিফে নেই। আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। তবে কোনো প্রকার ঘোষণা বা আহ্বান ছাড়া মানুষজন যদি মসজিদে একত্র হয়ে যায়, তাহলে তারা একাকী ইবাদত করতে পারে। এতে কোনো সমস্য নেই।
লক্ষণীয় যে, এক শ্রেণির যুবক আছে— তারা এ রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় সময় কাটায়, উচ্চ স্বরে জিকির করে; অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো সম্পূর্ণ বর্জনীয়। কারণ এতে কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট হতে পারে। আর অন্যকে কষ্ট দিয়ে নফল ইবাদত করার কোনো বিধান শরিয়তে নেই।
পটকা বাজানো, খিচুড়ি পাকিয়ে বণ্টন করা; মিষ্টি, হালুয়া ও শিরনি বিতরণ; মসজিদে একত্র হয়ে ইবাদত, জিকির, আতশবাজি, চেরাগপ্রথা ও কবরস্থানে মেলার মতো গমনাগমন ইত্যাদি সুস্পষ্ট বিদআত ও কুসংস্কার।
সর্বশেষ কথা
সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ঠিক তেমনি আমরা যদি ভুল পথে এবাদত বন্দেগী করে থাকি তাহলে গুনাহের শেষ নেই। পবিত্র শাবান মাসে শবে বরাত পালন করা হয়ে থাকে আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে শবে বরাত পালনের নিয়ম সহ করনীয় ও বর্জনীয় কাজ সহ আলোচনা করেছি। আশা করি ইতিমধ্যে আপনি এ রাত পালন করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সুতরাং নিয়ম মেনে পবিত্র শবে বরাত পালন করুন এবং মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জন করুন। ধন্যবাদ।
আরও দেখুনঃ
বাংলাদেশে পবিত্র শবে বরাত কবে ২০২৪ – শবে বরাতের নামাজ
শবে বরাতের রোজা কয়টি, কবে ও নিয়ত সম্পর্কে জানুন
আমি সুজন। আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি ঢাকা পলিটেকনিকে পড়ালেখা করছি। আমার পড়া লেখার পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।