বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ধরনের ভাতা বা সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সকল সুবিধা গুলো শুধুমাত্র সমাজের দরিদ্র ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড বা প্রতিবন্ধী ভাতা তার মধ্যে একটি। ২০২১ সালে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন প্রণয়ন করা হলেও বাংলাদেশ ২০০৫-০৬ অর্থবছর হতে সমাজের অসচ্ছল ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ এই প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড বা প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিবন্ধী আইডি কার্ডকে আবার সুবর্ণ নাগরিক কার্ডও বলা হয়ে থাকে।
আপনি অথবা আপনার আশেপাশে অথবা আপনার আত্মীয়-স্বজন যদি কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এর নিকট আবেদন করার মাধ্যমে খুব সহজে আপনি এই প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড বা সুবর্ণর কার্ড পেতে পারেন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনার সাথে অনলাইনে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড আবেদন করার নিয়ম বা প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করব। এই প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড পেতে হলে আপনাকে কি কি যোগ্যতা বা শর্তাবলী পূরণ করতে হবে সে সম্পর্কেও জানাবো।
প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড কি
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে বা জানতে চাই প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড কি? ২০০১ সালে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন প্রণয়ন করা হয়। যাতে প্রতিবন্ধীরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে এই প্রতিবন্ধী কার্ডের প্রচলন চালু করা হয়। প্রতিবন্ধী কার্ডটি সুবর্ণ কার্ড হিসেবেও পরিচিত। ২০০৫-০৬ অর্থ বছর হতে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়, যার মাধ্যমে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিশেষ ধরনের কিছু সুযোগ-সুবিধা লাভ করে থাকেন।
শুরুতে প্রতিবন্ধী পাতার পরিমাণ মাসিক ২০০ টাকা হিসেবে শুরু করা হলেও বর্তমানে তা প্রতি মাসে ৮শত টাকা করা হয়েছে। তাই আমরা সহজে বলতে পারি যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যে কার্ডের প্রচলন করা হয়েছে তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড বা সুবর্ণ নাগরিক কার্ড বলা হয়
প্রতিবন্ধী কার্ড করতে কি কি লাগে
প্রতিবন্ধী কার্ড শুধু মাত্র সমাজের অসচ্ছল, কাজ করতে পারে না এরকম ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। আপনি যদি প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু যোগ্যতা বা প্রয়োজনীয়তা অনুসরণ করতে হবে। এখন আমরা জানবো প্রতিবন্ধী কার্ড করতে কি কি লাগে বা আপনাকে কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
- প্রতিবন্ধী কার্ড পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে তার অভিভাবক এটি ব্যবহার করতে পারবে।
- আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে।
- আবেদন ফরমের নির্দিষ্ট জায়গায় আবেদনকারীর স্বাক্ষর বসাতে হবে।
- আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল এড্রেস থাকতে হবে।
- অনলাইনে আবেদন ফরম আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা উপজেলা বা শহর সমাজসেবা কার্যালয় দাখিল করতে হবে।
- উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় হতে প্রদত্ত সময় অনুযায়ী ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাজির হতে হবে।
- ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাজির হবার সময় অনলাইনে পূরণকৃত আবেদন ফরমের একটি প্রিন্ট কপি সঙ্গে আনতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা শহর সমাজসেবা কার্যালয় হতে এসএমএস(SMS) পাওয়ার পর পরিচয় পত্র বা আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
অনলাইনে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড করার নিয়ম
বাংলাদেশ সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রতিবন্ধীদের জন্য আইডি কার্ড চালু করার একটি ব্যবস্থা করেছে। এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। এই আইডি কার্ড পেতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনেকেই ইন্টারনেটে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই। তাই এখন আমি ধাপে ধাপে অনলাইনে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড আবেদন করার নিয়ম শেয়ার করব।
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ, তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে এখন আমরা ঘরে বসেই আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারি। অনলাইনে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করার নিয়ম চালু করার পর এখন আর আগের মত হাতে লিখে আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার প্রতিবন্ধী আইডি কার্ডের জন্য অনলাইনের আবেদন কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন।
- প্রথমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে http://dis.gov.bd সাইটে প্রবেশ করতে হবে ।
- এবার আপনার সামনে একটা আবেদন ফরম আসবে। আবেদন ফর্মটি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।
- আবেদন ফর্মটি সূচনা অংশ, সেকশন-১ ,সেকশন-২ এবং সর্বশেষ সেকশন -৩ এই চারটি অংশ আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।
- সফল ভাবে আবেদন ফরমটি পূরণ করা হয়ে গেলে পূরণকৃত ফর্মটি সাবমিট করতে হবে এবং আপনাকে এটি প্রিন্ট করে নিতে হবে।
- এরপর আপনাকে যখন মেডিকেল টেস্টের জন্য সমাজসেবা অফিস থেকে ডাকা হবে তখন নির্ধারিত দিনে মেডিকেলে গিয়ে ডাক্তারের কাছে আপনার টেস্ট করে নিতে হবে।
- আপনার সকল তথ্যটি সঠিক থাকে এবং শারীরিক সমস্যা যদি ডাক্তার খুঁজে পায় তাহলে আপনাকে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী কার্ড এর জন্য বিবেচনা করা হবে।
- পরবর্তীতে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত এসএমএসের মাধ্যমে আপনাকে প্রতিবন্ধী কার্ড সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
ভাতা প্রাপকের যোগ্যতা ও শর্তাবলী
প্রতিবন্ধী কার্ড পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু শর্তাবলী ও যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। কোনোভাবেই সচ্ছল এবং কাজ করতে পারে এরকম ব্যক্তির জন্য প্রতিবন্ধী কার্ড প্রযোজ্য নয়। আবেদন করার আগে অবশ্যই আপনাকে এ সকল যোগ্যতা ও শর্তাবলী জেনে নিতে হবে। এখন আমি আপনার সাথে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপকের যোগ্যতা ও শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করব।
- সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে;
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী সমাজসেবা কার্যালয় হতে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা সে জেলা হতে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র গ্রহণ করবেন;
- মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৬,০০০ (ছত্রিশ হাজার) টাকার উর্ধে নয় এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ;
- আবেদনকারীকে অবশ্যই দুঃস্থ প্রতিবন্ধী হতে হবে;
- ৬ (ছয়) বছরের উর্ধে সকল ধরণের প্রতিবন্ধীকে ভাতা প্রদানের জন্য বিবেচনায় নিতে হবে;
- বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
- প্রতিবন্ধী কার্ড শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অথবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার অভিভাবক ব্যবহার করতে পারবেন।
ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা
প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করলেই যে আপনি তা পেয়ে যাবেন এরকম নয়। এখানে বেশ কিছু ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্য রয়েছে। যার কারণে আপনার প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদনটি গ্রহণ নাও করা হতে পারে।
- সরকারি কর্মচারী হলে কিংবা সরকারি কর্মচারী হিসেবে পেনশনভোগী হলে;
- অন্য কোনভাবে নিয়মিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হলে;
- কোন বেসরকারি সংস্থা/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত হলে।
প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড সংশোধন
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আমাদের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইডি কার্ড হয়ে যাওয়ার পর কিছু ভুল বা তথ্যের অসামঞ্জসতা দেখা যায়। এ সময় জরুরি ভাবে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড সংশোধন করা প্রয়োজন হতে পারে। অনেকেই আইডি কার্ড সংশোধন করা নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে বা একটা অসুবিধার মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজে এই প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন।
এখানে ক্লিক করে আবেদন পত্র টি সংগ্রহ করুণ
এই কাজটি করার জন্য আপনাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড সংশোধনের একটি আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হবে। সেই আবেদনপত্রে আপনার সঠিক তথ্যগুলো প্রধানের মাধ্যমে আবেদন পত্রটি জমা দিতে হবে। অল্প কিছুদিনের ভিতরেই আপনার তথ্যগুলো যাচাই-বাচার করার মাধ্যমে সংশোধন করে দেওয়া হবে।
সর্বশেষ কথা
প্রতিবন্ধী আইডি কার্ডটি শুধুমাত্র আমাদের সমাজের প্রতিবন্ধী এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। আপনার যদি একান্তই এই সুবিধা ভোগ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলেই আবেদন করুন, অন্যথায় অন্যদেরকে সুযোগ প্রদান করুন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনার সাথে অনলাইনে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড আবেদন করার নিয়ম বা প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আবেদন করার পূর্বে যে সকল যোগ্যতা বা শর্তাবলী পূরণ করা আবশ্যক তা আপনি জানতে পেরেছেন। সুতরাং অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে আপনার প্রতিবন্ধী আইডি কার্ডটি সংগ্রহ করে নিন।
আরও দেখুনঃ
বয়স্ক ভাতা অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম ২০২৩
শিশু ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম ২০২৩ – আবেদন ফরম
বিভিন্ন প্রকার ভাতার টাকা মোবাইলে দেখার নিয়ম ২০২৩
বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং নগদ, বিকাশ, শিওর ক্যাশ, রকেট ডাচ বাংলা
বয়স্ক ভাতা কি ও কত সালে চালু হয় এবং কত টাকা দেয়া হয়?
আমি সুজন। আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি ঢাকা পলিটেকনিকে পড়ালেখা করছি। আমার পড়া লেখার পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।
I’m impressed, I have to admit. Rarely do I come across a blog that’s both educative and engaging,
and without a doubt, you’ve hit the nail on the head.
The problem is something which not enough men and women are
speaking intelligently about. Now i’m very happy that I came across this in my search
for something concerning this.
Feel free to surf to my site :: NID Name Correction
Backlink Exchange??