শিশু ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪

বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক গ্রাম অঞ্চলের ও শহর অঞ্চলের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মহিলাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে একটি ভাতা প্রদান করে থাকে। যাকে শিশু ভাতা বা মাতৃকালীন ভাতা বলা হয়ে থাকে। গ্রামে ২০০৭-০৮ অর্থবছর  হতে এবং শহরে ২০১০-১১ অর্থবছর হতে দরিদ্র নারীদেরকে এই ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হয়। এখন পর্যন্ত প্রতিবছর নিয়মিত হারে এ বা তা প্রদান করা হচ্ছে।

এটি মূলত একটি সামাজিক নিরাপত্তা মূলক স্কিম যার মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা দ্বারা হয়ে থাকে। এই ভাতার আওতায় দুটি সন্তানের জন্য প্রথম তিন বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৮শত টাকা হারে মাথা প্রদান করা হয়। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে এবং কিছু শর্ত সাপেক্ষে এই ভাতা পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে অনলাইনে এই শিশু ভাতার আবেদন করা যাচ্ছে।

আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে শিশু ভাতা অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। এর সাথে সাথে এই ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা ও  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগে সে সম্পর্কেও জানানোর চেষ্টা করব। আশা করি আজকের এই পোস্টে দেখানো নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনি আবেদন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই শিশু ভাতা প্রাপ্তির যোগ্য হবেন। তাই দয়া করে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সকল নিয়ম মেনে অনলাইনে আবেদন করুন।

শিশু ভাতা কার্ড

যে সকল অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও মাতৃ ভাতার আওতায় থাকে তাদেরকে শিশু ভাতা কার্ডধারী বলা হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদানের মাধ্যমে এই শিশু-ভাতার আওতায় আসা যায়। গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র ও সুবিধামঞ্চিত মানুষদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই বাংলাদেশ সরকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই সুবিধা প্রদান করে থাকে।

শিশু ও মাতৃত্ব ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা

পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গর্ভবতী মহিলাদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তাদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দেয়ার জন্য ২০০৭-০৮ অর্থবছর হতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি গ্রহন করেছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হয়ে আসছে।

পল্লী বা গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গর্ভবতী মহিলাদেরকে তাদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিশু ও মাতৃত্ব ভাতার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সকলেই চাইলে এই ভাতার আওতায় আসতে পারবে না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের পর এই ভাতা প্রাপ্ত হবে। শিশু ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে এ সকল যোগ্যতা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। তাই এখন আমি আপনার সাথে শিশু ও মাতৃত্ব ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা গুলো শেয়ার করবও

  • প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভকালীন সময়কাল (যে কোনো সময়)।
  • বয়স কমপক্ষে 20 বছর বা তার বেশি।
  • মোট মাসিক আয় 1500/-টাকার নিচে।
  • দরিদ্র প্রতিবন্ধী মায়েরা বেশি অগ্রাধিকার পাবেন।
  • শুধু একটি বাড়ি আছে বা অন্য জায়গায় থাকতে হবে।
  • নিজের বা পরিবারের জন্য কোনো কৃষি জমি নেই, মাছ চাষের জন্য কোনো পুকুর নেই।
  • বাছাইয়ের সময় আবেদনকারীকে অবশ্যই গর্ভবতী হতে হবে, অর্থাৎ জুলাই মাসে।
  • প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভাবস্থার সন্তান গর্ভাবস্থায় বা জন্মের ২ (দুই) বছরের মধ্যে মারা গেলে, তৃতীয় গর্ভাবস্থায় ভাতা দেওয়া হবে।
  • সুবিধাভোগীরা জীবনে একবার 2 (দুই) বছরের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবেন।
  • যদি কোনো কারণে শিশুর মৃত্যু হয় বা গর্ভপাতের কারণে চক্রটি অসম্পূর্ণ থাকে, তারপর যদি সে গর্ভবতী হয়
  • আবার, অন্যান্য শর্ত পূরণ হলে তিনি পরবর্তী 2 (দুই) বছরের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার অধিকারী হবেন।

এখানে সর্বমোট ১১ টি শর্ত রয়েছে, পরে উল্লেখিত শর্তগুলির মধ্যে ১, ২ ও ৭ নং শর্ত তিনটি অত্যাবশ্যকীয়। এই তিনটি শর্তসহ আপনাকে সর্বমোট পাঁচটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এরপরেই আপনার নাম প্রাথমিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আপনি মাথা পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই এর ভিত্তিতে আপনাকে চূড়ান্তভাবে ভাতা প্রাপ্তির নিশ্চয়ন করা হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সফলভাবে অনলাইনে শিশু ভাতার জন্য আবেদন সম্পন্ন করার পর আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। কোন কারনে যদি আপনি এ সকল কাগজপত্র জমা না দিতে পারেন তাহলে আপনার আবেদনটি বাতিল বলে গণ্য হবে। তাহলে আসুন নিচে থেকে জেনে আসি কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দরকার হবে।

  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্তৃক গর্ভকালীন সনদ।
  • নাগরিক সনদ বা এনআইডি কার্ড।
  • ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত সনদ এবং
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ

আশা করি এ সকল কাগজপত্র জমা দিলে এবং আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সঠিক হয়ে থাকলে আপনি সহজে ভাতা প্রাপ্তি হিসেবে গণ্য হন্ন। তবুও যদি কোন কারণে আপনার এই সুবিধাটি পেতে অসুবিধা হয় তাহলে অতিসত্বর জেলা এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।

শিশু ভাতা আবেদন ফরম ২০২৩

এই মুহূর্তে শিশু ভাতার জন্য শুধুমাত্র অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা যায়। আপনি যদি শিশু ভাতা আবেদন ফরম খুঁজে থাকেন তাহলে আপনাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করার মাধ্যমে অনলাইন থেকে আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে। নিচের অংশে আমি একটি ছবির মাধ্যমে আপনাদের সাথে এই আবেদন ফরমের একটি নমুনা শেয়ার করেছি। এখানে যে সকল তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে তা ধৈর্য সহকারে সঠিকভাবে পূরণ করুন।

শিশু ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪

বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই যেকোনো ধরনের কাজ সম্পন্ন করা যায়। অনলাইনে চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ধরনের ভাতার জন্য আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বর্তমানে মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি মা ও শিশু ভাতার ব্যবস্থা রেখেছে। আপনি যদি এই ভাতা প্রাপ্তির আওতায় আসতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। সঠিক নিয়ম মেনে ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমাদানের মাধ্যমে শুধুমাত্র আপনি এর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

অনেকেই ইন্টারনেটে শিশু ভাতা আবেদন করার নিয়ম খুঁজে থাকে। তাই এখন আমি আপনাদের সাথে ধাপে ধাপে এই আবেদন করার নিয়মটি শেয়ার করব। প্রত্যেকটি  ধাপ বিস্তারিতভাবে আপনাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে দেরি না করে চলুন নিচের দেখানোর পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে অনলাইনে আবেদনের কাজ সম্পন্ন করি।

  • সর্বপ্রথম আপনাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবেঃ এখানে প্রবেশ করুণ
  • আপনাকে একটি অনলাইন আবেদন ফরম পেজে নিয়ে যাওয়া হবে।
  • এই আবেদন ফরমে আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য, বর্তমান ঠিকানা, আর্থ-সামাজিক তথ্য, ছবি/স্বাক্ষর সঠিক ভাবে প্রদান করতে হবে।
  • সকল তথ্যগুলো সঠিকভাবে সংযুক্ত করার পর আবেদন পত্রটি আরেকবার চেক করে নিন।
  • সর্বশেষ নিচের “সংরক্ষণ করুণ” বাটনে ক্লিক করে আপনার আবেদনটি সাবমিট করুন।
  • এরপর আপনার আবেদন ফরমটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিন।

অনলাইনে আবেদন সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন এবং উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে আপনার নিকটস্থ জেলা বা উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন।

শিশু ভাতা কত টাকা

সর্বপ্রথম ২০০৭-০৮ অর্থবছরে গ্রামীণ এলাকায় এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে শহরাঞ্চলে শিশু ও মাতৃভাষা চালু করা হয়। বর্তমানে এটি এখনো চালু রয়েছে এবং নিয়মিত শিশু ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। নতুন ভাবে শিশুর ভাতার আসতে চায় তারা জানতে চেয়েছে যে শিশুর ভাতা কত টাকা। সুতরাং আপনাদেরকে জানাতে চাই যে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের এই কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা গর্ভধারণ থেকে সন্তান জন্মদানের পর তিন বছর পর্যন্ত মাসে ৮০০ টাকা ভাতা পান। সুতরাং শিশু ভাতা মাসে ৮০০ টাকা

সর্বশেষ কথা

বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত শিশু ও মাতৃ ভাতা টি শুধুমাত্র দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য প্রদত্ত। আপনার যদি একান্তই এই ভাতার প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে আবেদন করুন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে শিশু ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম এবং এই ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগে এ সম্পর্কে  বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি ইতিমধ্যে আপনি সঠিকভাবে আপনার আবেদন ফরমটি সাবমিট করতে পেরেছেন।

আরও দেখুনঃ

অনলাইনে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড আবেদন করার নিয়ম ২০২৪

বয়স্ক ভাতা অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম ২০২৪

বয়স্ক ভাতা কি ও কত সালে চালু হয় এবং কত টাকা দেয়া হয়?

বিভিন্ন প্রকার ভাতার টাকা মোবাইলে দেখার নিয়ম 

বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং নগদ, বিকাশ, শিওর ক্যাশ, রকেট ডাচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *