মাতৃত্বকালীন (গর্ভবতী) ভাতা ২০২২-২০২৩ অনলাইন আবেদন

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের শ্রেণীর নাগরিকদের কে বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ভাতা হচ্ছে মাতৃকালীন ভাতা বা গর্ভবতী ভাতা। বাংলাদেশে প্রতি বছর চিকিৎসার অভাব ও পুষ্টির অভাবের কারণে অনেক মা ও শিশু মৃত্যু বরণ করে থাকে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সাল থেকে এই মাতৃকালীন ভাতা প্রদান করার ব্যবস্থা চালু করেছে।

গর্ভবতী ভাতা মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর এর আওতায় একটি নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই কর্মসূচির আওতায় যে সকল দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা রয়েছে তাদেরকে সন্তান জন্মদানের পর তিন বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। বর্তমানে মাতৃকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে আপনি এই ভাতার আওতায় আসতে পারেন।

অনেকেই ইন্টারনেটে মাতৃকালীন ভাতা অনলাইনে আবেদন কিভাবে করতে হয় তা খুঁজে থাকে। এর আগে নির্দিষ্ট অফিসে ভিজিট করার মাধ্যমে এই ভাতার জন্য আবেদন করা যেত। কিন্তু বর্তমানে এটি অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মাতৃকালীন ভাতা বা গর্ভবতী ভাতার অনলাইন আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে এই ভাতার জন্য আবেদন করতে হবে এবং কি কি শর্ত পূরণ করতে হবে তারা বিস্তারিত জানানো হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

সারা বাংলাদেশ জুড়ে ২০১১ সাল থেকে মাতৃকালীন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু এই ভাতা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে। সকলেই এই ভাতার আওতায় আসতে পারবে না। শুধুমাত্র গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র গর্ভবতী মহিলারা এই ভাতা প্রাপ্য হবে।

আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ করার মাধ্যমে এই ভাতা পেতে পারেন। তবে আপনাকে অবশ্যই কিছু প্রযোজ্য শর্ত মেনে এই আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। মাতৃকালীন বা গর্ভবতী পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই গর্ভাবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এছাড়াও আপনার ছবি এবং ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অনলাইন ফরম পূরণ করতে হবে।

সর্বশেষ আপনার আবেদন ফরমটি আপনার নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা কাউন্সিলর অফিসে জমা দিতে হবে। এরপর আপনার নিজের উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। সর্বশেষ আপনার আবেদনের তথ্যগুলো এবং অন্যান্য শর্তাবলী ঠিক থাকলে আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এর পরেই আপনি নির্দিষ্ট মাধ্যমে প্রতি মাসেই আপনি মাতৃকালীন ভাতা পেতে পারবেন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা ২০২২-২০২৩ অনলাইন আবেদন

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসের ওয়েবসাইট ভিজিট করার মাধ্যমে এবং নির্দিষ্ট তথ্য ও প্রদানের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই মাত্র কালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারেন। চলতে ২০২-২৩ অর্থবছরের গর্ভকালীন ভাতার জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তাদের আবেদন জমা দিয়েছেন এবং আবার অনেকেই ইন্টারনেটে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।

বর্তমান বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজ করার উদ্দেশ্যে প্রায় সকল ধরনের সেবা অনলাইন ভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য আপনি নিজেই এই মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনি যদি অনলাইনে আবেদন কিভাবে করতে হয় তা না জেনে থাকেন তাহলে নিচের অংশ থেকে তা দেখে নিতে পারেন। অনলাইনে আবেদন করার প্রতিটি ধাপ আমি আপনাদের সাথে বিস্তারিত ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছি।

ধাপ ১: আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান

মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা। সর্বপ্রথম আপনাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যে সরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে প্রবেশ করতে হবে। আপনি চাইলে সরাসরি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration এই লিংকে প্রবেশ করুন। প্রবেশ করার পর নিচের দেওয়া ছবির মত একটি ওয়েব পেজ আপনার সামনে ওপেন হবে।

নির্ভুলভাবে উক্ত ফর্মে আপনাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন। ফরমটি পূরণ করার জন্য আপনাকে বর্তমান অর্থবছর, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, নাম বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতে, পিতা মাতার নাম, স্বামীর নাম, ব্যাচ নাম্বার সহ আরো যে সকল তথ্য যাওয়া হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন।

দ্বিতীয় অংশে এলাকায় আপনি যে নামে পরিচিত তা লিখুন, আপনার জন্মস্থান, ধর্ম এবং একটি সচল মোবাইল নাম্বার প্রদান করুন। তারপর আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, রক্তের গ্রুপ, বৈবাহিক অবস্থা জানাতে হবে। সর্বশেষ আপনি যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন তাহলে এনআরবি চিহ্নিত বক্সে টিক মার্ক করুন। এছাড়াও আপনি যদি সরকার প্রদত্ত অন্য কোন ভাতা ভোগী হয়ে থাকেন তাহলে ডানপাশের বক্সটিতে টিক মার্ক করুন।

ধাপ ২: বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা

মাতৃকালীন ভাতার আবেদন করার দ্বিতীয় দাপ হচ্ছে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করা। দ্বিতীয় ধাপে আপনি নিচের মত একটি স্ক্রিন দেখতে পারবেন। স্ক্রিনে প্রদত্ত যে সকল তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে আপনার গ্রামের নাম, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নং ও পোস্ট কোড সঠিকভাবে প্রদান করুন। ডান পাশের অংশে আপনাকে স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করতে হবে।

যদি আপনার বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই হয়ে থাকে তাহলে ডানদিকে উপরের অংশে একটি বক্স দেখতে পারবেন। আপনার ঠিকানা যদি একই হয়ে থাকে তাহলে বক্সে টিক মার্ক করে দিলেই হবে।

ধাপ ৩: আর্থ-সামাজিক তথ্য

ইতোমধ্যেই আশা করি আপনি প্রথম দুটি ধাপ সফলভাবে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ পর্যায়ে আপনাকে তৃতীয় ধাপে আপনার আর্থ-সামাজিক তথ্য প্রদান করতে হবে। এই ধাপে আবেদনকারী পরিবারের প্রথম রোজকারী মহিলা কিনা তা জানাতে হবে, এরপর মাসিক আয়, আবেদনকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী কিনা, বাসস্থান আছে কিনা, কৃষি জমি বা পুকুর আছে কিনা, আবেদনকারীর বয়স ও গর্ভধারণ ক্রম জানাতে হবে।

উল্লেখ্য যে মাসিক আয় ১৫০০ টাকার মধ্যে হতে হবে। এছাড়াও কৃষি জমি বা পুকুর আছে কিনা এই অংশটিতে না বোধক বেছে নিন। গর্ভধারণ ক্রম বলতে আপনি কততম সন্তান জন্মদান দিতে যাচ্ছেন তা বোঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে আপনি প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের জন্য শুধুমাত্র এই ভাতা প্রাপ্য হতে পারেন।

ধাপ ৪: পেমেন্টের তথ্য

মাতৃকালীন ভাতার অনলাইন আবেদন করার ক্ষেত্রে চতুর্থ ধাপে আপনাকে পেমেন্টের তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনি যদি ভাতার জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন তাহলে প্রতি মাসে ভাতার টাকা আপনাকে কিভাবে প্রদান করবে তার তথ্য এখানে দিতে বলা হয়েছে। আপনি পেমেন্টের ধরন অপশন থেকে আপনার ব্যাংক একাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং এর একাউন্ট প্রদান করতে পারেন।

ধাপ ৫: ছবি / স্বাক্ষর ও সংযুক্তি

শেষ ও পঞ্চম ধাপে আপনাকে আবেদনকারীর ছবি ও স্বাক্ষর জমা দিতে হবে। পূর্বে থেকেই আপনার সুন্দর একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং স্বাক্ষর এর ছবি সংরক্ষণ করে রাখুন। নির্দিষ্ট স্থানে ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করার পর সর্বশেষ সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করুন। ব্যাস আপনার মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদনটি সফলভাবে সাবমিট হয়েছে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা

চাইলেই সকলেই মাতৃত্বকালীন বা গর্ভবতী ভাতা প্রাপ্য হবে না। এই ভাতার পাওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এ সকল নীতিমালার আওতায় যে সকল দরিদ্র অন্তসত্তা মায়েরা রয়েছে, শুধুমাত্র তারাই এই ভাতা পাবে। অনলাইনে মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করার পূর্বে নীতিমালা সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী। নিচের অংশ থেকে নীতিমালা বা গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জেনে নিন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী প্রযোজ্য-

  • আবেদনকারীর বয়স ২০-৩৫ বছর হতে হবে।
  • এন আই ডি কার্ড থাকতে হবে।
  • প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভবস্থার ক্ষেত্রে আবেদন করা যাবে।
  • নিজ নামে পছন্দসই অনলাইন/মোবাইল ব্যাঙক একাউন্ট থাকতে হবে।
  • পারিবারিক মাসিক আয় সর্বোচ্চ ৮০০০ টাকা হতে হবে।
  • শুধুমাত্র দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের জন্য এ ভাতা।
  • বাসস্থান আছে কিন্তু কোন কৃষিজমি বা পুকুর না থাকলে আবেদন করা যাবে।
  • প্রতিবছর জুলাই মাসে ভাতা ভোগী-নির্বাচন করার সময় অবশ্যই কমপক্ষে ৫ মাসের গর্ভবতী হতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা?

অনেকেই ইন্টারনেটে মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করার পাশাপাশি প্রতিমাসে মাতৃকালীন ভাতা কত টাকা দেওয়া হয় তা জানতে চায়। পূর্বে যদিও এই ভাতার পরিমাণ অনেক কম ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা অনেকাংশই বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে এই কর্মসূচির আওতায় যে সকল ভাতা ভোগী রয়েছে তারা প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে ৩৬ মাস পর্যন্ত এই ভাতা পেয়ে থাকে। শুধুমাত্র প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে এই ভাতার টাকা প্রদান করা হয়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা বয়স সীমা

মাতৃকালের মাথা আবেদন করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খালি ভাতা বয়স সীমা। এই ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। শুধুমাত্র প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে আবেদনকারী এই ভাতা কম হতে পারে।

সর্বশেষ কথা

যেহেতু সরকার কর্তৃক শুধুমাত্র দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য এই সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। তাই আপনার যদি একান্তই এই সুবিধা নিতে প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে আবেদন করুন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে মাতৃকালীন বা গর্ভবতী ভাতা অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া দেখিয়েছি। এর পাশাপাশি ভাতা কত টাকা বা এই ভাতা পাওয়ার কি কি শর্ত রয়েছে তাও জানানোর চেষ্টা করেছি। । আশা করি ইতিমধ্যে আপনি এই পোস্টটা দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার গর্ভবতী ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে সফল হয়েছেন।

3 thoughts on “মাতৃত্বকালীন (গর্ভবতী) ভাতা ২০২২-২০২৩ অনলাইন আবেদন

  1. আমার মা এক জন গরভোবতি আমার খুব টাক পড়ো ওজন আমার বিকাশ নাম্বার ( 01402396145)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *