ব্যবসায় করে লাখপতি হতে চান তাহলে ফার্মেসি ব্যবসায় হতে পারে আপনার সে আসল উপায় । সঠিকভাবে নিজেকে দক্ষ করে যথাযথ স্থানে একটি ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করা গেলে আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না । এটি একটি লাভজনক ও নগদ ব্যবসায় । এই ব্যবসায় অনেক মেডিসিন বিক্রি করে প্রায় ৫০% লভ্যাংশও পাওয়া যায় ।
তবে ফার্মেসি ব্যবসায় করার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন নিজেকে দক্ষ করেই তারপর এই ব্যবসায় শুরু করতে হয় । অন্যথায় বিভিন্ন আইনি সমস্যা ছাড়াও মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে । তাই একটি ফার্মেসি ব্যবসায় শুরু করতে কি কি জানা প্রয়োজন তার সবকিছুই আজকের আর্টিকেলে প্রকাশ করা হয়েছে । তাই মনোযোগসহকারে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইল ।
ফার্মেসি ব্যবসার আইডিয়া এবং এর নিয়মকানুন সমূহ-২০২৩
ফার্মেসি ব্যবসা কি ?
ফার্মেসি ব্যবসা কি তার কোনো আনুষ্টানিক সংঙ্গা আমাদের জানা নেই তবে যারা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দোকানে বিক্রি করে তাদেরকে ফার্মেসিস্ট এবং তাদের ব্যবসায়কে ফার্মেসি ব্যবসায় বলে ।
ফার্মেসি ব্যবসা কেন করবেন ?
আমাদের চারপাশে হাজারো – লাখো ব্যবসায় রয়েছে কিন্তু আপনি কেন ফার্মেসি ব্যবসায় করবেন । ফার্মেসি ব্যবসায় শুরু করার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে এর গ্রাহক সেক্টর বা বাজার সাইজ অনেক বড় । ছোট – বড় , তরুন – বয়স্ক সকলেরই কমবেশি রোগ বা অসুখ হয় আর তখনি তারা ফার্মেসির দ্বারস্থ হয় ।
মনে রাখবেন – একজন ধনী লোকের অনেক কিছুর প্রয়োজন হয় কিন্তু একজন অসুস্থ ব্যাক্তির শুধু সুস্থ স্বাস্থ্যের প্রয়োজন হয় । আর এই কারণে মানুষ অসুস্থ হলে কোন ঔষুধ সস্তা নাকি দামী তা লক্ষ করে নাহ তারা ফোকাস করে রোগ সারবে কিনা তার ।
তাই সৎভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে এই ব্যবসায় করতে পারলে অল্পদিনেই মানুষের মন জয় করে নেওয়া সম্ভব । এবং মানুষের মন জয় করা গেলেই আপনার ব্যবসায় অটোমেটিক বৃদ্ধি পাবে ।
ফার্মেসি ব্যবসায় লাভ কেমন ?
ফার্মেসি ব্যবসায় যথেষ্ট পরিমাণ লাভ রয়েছে তবে কিছু বিষযের ওপর নির্ভর করে আপনি কি পরিমাণ লাভ করতে পারবেন ফার্মেসি ব্যবসা করে । আপনার ফার্মেসি ব্যবসাটি যদি একটি হাসপাতাল এর আশেপাশে হয়ে থাকে এক্ষেত্রে আপনি প্রচুর কাস্টমার পাবেন এবং এতে করে আপনার ওষুধ বিক্রি ও বেশি হবে । আর যেই ব্যবসায় বিক্রি বেশি সেই ব্যবসায় প্রফিট ও বেশি ।
এছাড়াও আপনার দক্ষতা এবং ব্যবসা পরিচালনা করার কৌশল নির্ভর করবে ফার্মেসী ব্যবসা করে আপনি কেমন লাভ করতে পারবেন ।
তবে ফার্মেসী ব্যবসায় অনেকে অসদুপায় অবলম্বন করে প্রচুর টাকা উপার্জন করে থাকে । যেমন অন্যান্য ব্যবসায় পণ্যের উপরে বিক্রিত দাম লেখা থাকলেও ওষুধের গায়ে অনেকসময় বিক্রয় মূল্য লেখা থাকে না । বা মানুষ অসুস্থ হয়ে নিরুপায় থাকার কারণে দামাদামি করে না যার ফলে অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী উচ্চমূল্যে ওষুধ বিক্রি করে থাকে ।
কিন্তু এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করলে বেশিদিন ব্যবসা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না । কারণ কেউ না কেউ এই ধরনের অপকর্মগুলো ধরে ফেলবে । আর যখন থেকেই মানুষ বুঝতে পারবে আপনি ন্যায্যমূল্যর চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ওষুধ বিক্রি করছেন তখন কেউ আপনার ফার্মেসী দোকানে আসবে না ।
তাই সবসময় কাস্টমারের সাথে সুসম্পর্ক ও সদ্ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করার চেষ্টা করবেন ।
ফার্মেসি ব্যবসায় কিভাবে শুরু করবেন ?
বন্ধুরা ইতিমধ্যে ফার্মেসী ব্যবসা সম্পর্কে আপনারা অনেক কিছু জেনেছেন এবং আপনাদের মধ্যে এখন হয়তো এই প্রশ্ন জেগেছে যে কিভাবে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে ? তাহলে চলুন আপনাদের এই প্রশ্নের সমাধান দেওয়া যায় ।
ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করতে হলে যেসব জিনিস প্রয়োজন তা হলো :
➡️ ঔষধ বা মেডিসিন লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে ।
➡️ হাসপাতাল বা জনবহুল একটি স্থানে ফার্মেসির জন্য দোকান স্থাপন করতে হবে ।
➡️ ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট মূল্যবান থাকতে হবে ।
➡️ আপনার ফার্মেসী দোকানে একজন প্রফেশনাল ডাক্তার বসানোর চেষ্টা করতে হবে ।
➡️ সব ধরনের প্রয়োজনীয় এবং ভালো কোম্পানির ঔষধগুলো ফার্মেসিতে রাখতে হবে ।
➡️ ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করবে আপনাকে ফার্মেসীর উপর একটি কোর্স করতে হবে ।
➡️ ডাক্তার প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে ।
এই বিষয়গুলো সংগ্রহ এবং জানার পরেই আপনি ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করার জন্য অগ্রসর হতে পারেন । সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কোন ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব নয় তাই একটি ফার্মেসি ব্যবসায় শুরু করতেও আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে ।
ফার্মেসি কোর্স:
ফার্মেসী বা ওষুধের দোকান দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে ফার্মেসী ফাউন্ডেশন কোর্সটি করতে হবে । কোর্সটির সময়সীমা হলো প্রায় ৩মাস । তবে ফার্মেসি কোর্স সাধারণত তিন ক্যাটাগরি হয়ে থাকে যেমন : ক্যাটাগরি এ , ক্যাটাগরি বি , ক্যাটাগরি সি ।
যারা একজন ফার্মেসিস্ট হয়ে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে চান তারা ক্যাটাগরির সি কোর্সটিতে এনরোল করবেন । ফার্মেসি ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে অথবা কোর্সে ভর্তির নোটিশ পেতে এই http://www.pcb.gov.bd/ ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ।
ঔষধ দোকনের জন্য লাইসেন্স:
ফার্মেসির দোকান দিতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে । তার মধ্যে অন্যতম একটি লাইসেন্স হলো মেডিসিন লাইসেন্স । চলুন দেখে নেয়া যাক মেডিসিন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন ।
➡️ এনআইডি কার্ড বা আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ।
➡️ ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স
➡️ পাসপোর্ট সাইজের কয়েকটি ছবি ।
➡️ দোকান ভাড়া চুক্তির রশিদ পত্র ।
➡️ ফার্মেসী ফাউন্ডেশন কোর্সে সার্টিফিকেট বা তার ফটোকপি ।
এরপর এই সাইট http://www.dgda.gov.bd/ থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে যথাযথ তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে । এছাড়াও এই মেডিসিন লাইসেন্স পেতে কি পরিমাণ ফি দিতে হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেও তাদের সাইট দিয়ে ভিজিট করুন ।
ফার্মেসী ব্যবসায় সফল হওয়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল:
প্রতিটি ব্যবসা সফল হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া বা কৌশল কাজ করে থাকে । ফার্মেসী ব্যবসাকে জনপ্রিয় এবং লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তর করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে । তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক সেই কৌশল গুলো ।
সঠিক জায়গায় নির্বাচন করা :
আপনি যদি লাইব্রেরী বা স্টেশনারি দোকান দেওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে সবার আগে হয়তো কোন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অথবা অফিস আদালতের সামনে স্টেশনারি দোকান স্থাপন করার চিন্তা করে থাকবেন । ঠিক তেমনি ফার্মেসী ব্যবসা শুরুর জন্য আদর্শ একটি স্থান হলো হাসপাতালের সামনে বা আশেপাশে ফার্মেসী দোকান স্থাপন করা ।
ফার্মেসিতে একজন অভিজ্ঞ ও প্রফেশনাল ডাক্তার রাখুন:
আপনার ফার্মেসিটি যদি হাসপাতালে আশেপাশে না হয় সেক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত একজন প্রফেশনাল ডাক্তার বসার ব্যবস্থা করতে পারেন । এতে করে দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন রোগীরা ডাক্তার দেখাতে আপনার ফার্মেসিতে ছুটে আসবে এবং তার প্রেক্ষিতে আপনার ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় করে নিয়ে যাবে ।
তাই বিভিন্ন প্রফেশনাল ও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ ও যোগাযোগ করে দেখুন তারা আগ্রহী কিনা ।
সব ধরনের ওষুধ সংগ্রহে রাখা:
শুধুমাত্র যেসব ওষুধগুলো বেশি বিক্রয় হয়ে থাকে সেইসব ওষুধ বিক্রি করা একজন আদর্শ ফার্মেসি ব্যবসায়ীর কাজ নয় । যেহেতু ব্যবসাটি মানুষের রোগ নিরাময়ের সেবা দিয়ে পরিচালিত তাই ব্যবসাটিকে সবসময় লাভ করার প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা ঠিক হবে না ।
তাই গুরুত্বপূর্ণ সব ধরনের ওষুধ ফার্মেসিতে সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করুন । এবং রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখে নিয়মিত সেই ধরনের ওষুধ ফার্মেসিতে সংগ্রহ করুন ।
ফ্রি চিকিৎসা প্রোভাইড করুন:
কিছু ফ্রি চিকিৎসা সার্ভিস আপনি আপনার ফার্মেসিতে প্রোভাইড করতে পারেন যেমন : ডায়াবেটিস পরীক্ষা, প্রেসার পরীক্ষা, শরীরের ওজন মাপাসহ নানান ধরনের পরামর্শ ফ্রিতেই দেওয়ার চেষ্টা করুন । এছাড়াও কোন রোগী খুবই অসুস্থ অনুভব করলে তার বাসায় গিয়ে ফ্রিতে প্রাথমিক চিকিৎসা করে আসুন ।
এতে করে কাস্টমার আপনার প্রতি ভালো মনোভাব তৈরি করবেন এবং আপনার দীর্ঘমেয়াদী একজন গ্রাহক হয়ে যাবে । এভাবেই কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে ফার্মেসীর ব্যবসাকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারবেন ।
পরিশেষে:
আমাদের আজকে ফার্মেসী ব্যবসার আইডিয়া আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে আশা করা যায় ফার্মেসী ব্যবসা সম্পর্কে আপনি এখন পূর্বের চেয়ে অনেক ভালো জানেন ।
আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে এসে থাকে সেক্ষেত্রে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনার মূল্যবান মতামত । এছাড়াও এই ধরনের হেল্ফফুল আর্টিকেলের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে ।