গ্রামে থেকে ১০টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া ২০২৩

বন্ধুরা আজকে আপনাদের সাথে গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো । আমরা অনেকেই মনে করি শুধু শহরেই ব্যবসা-বাণিজ্য করা সম্ভব কিন্তু সঠিক আইডিয়া থাকলে আপনি গ্রমে বসেও ব্যবসায় করতে পারবেন ।

আর এই জন্যই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নানান ধরনের ব্যবসায়িক আইডিয়া শেয়ার করে থাকি । তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক আজকের গ্রামের ব্যবসার আইডিয়াগুলো ।

 

গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া :

১.ফার্মেসির দোকান:
আজকের গ্রামের ব্যবসার আইডিয়ার মধ্যে ফার্মেসির ব্যবসাকে সবার উপরে রাখা হলো কারণ ফার্মেসি ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা আইডিয়া যা শহর এবং গ্রাম উভয় স্থানেই জনপ্রিয় ।

গ্রামের হাসপাতাল বা মেডিকেলের সামনে অথবা বাজারের মধ্যে ফার্মেসির দোকান দিয়ে ঔষধ বিক্রির ব্যবসা করা যেতে পারে ।

বিভিন্ন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে সে অনুযায়ী ঔষধ বিক্রি করার কাজই হচ্ছে একজন ফার্মেসিষ্টের কাজ । ফার্মেসি ব্যবসায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাইটে প্রকাশিত ফার্মেসি ব্যবসার আইডিয়া পোষ্টটি পড়ুন ।

 

২.দুগ্ধ বা দুধের ব্যবসা:
দুগ্ধ বা দুধের ব্যবসা শহরের তুলনায় গ্রামেই ভালো ও সুবিধাজনক কারণ গ্রামে প্রচুর গরু-ছাগল ও মহিষের খামার রয়েছে । যার ফলে সহজেই দুধ সংগ্রহ করা যায় । দুধগুলো সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন প্রতিষ্টানে সাপ্লাই দিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারবেন ।

এছাড়াও ভালো দাম বা মূল্যে পেতে শহরেও তা সাপ্লাই করতে পারেন । অথবা নিজেই দুধ দিয়ে পনির ,দই বা মিষ্টি বানিয়ে তা বিক্রি করতে পারেন । সেক্ষেত্রে একটু পুজিঁ যেমন বেশি লাগবে লাভও তেমনি বেশি হবে ।

 

৩.হাঁস-মুরগির খামার:
গ্রামে ব্যবসার জন্য উপযুক্ত ব্যবসার একটি আইডিয়া হলো হাঁস-মুরগির খামার করা । এইধরনের খামার শহরের জায়গা সল্পতা এবং অনুকূল পরিবেশের অভাবে করা যায় নাহ । কিন্তু গ্রামে শান্ত পরিবেশ এবং যথেষ্ট জায়গা রয়েছে এইধরনের খামার করার ।

তাই আপনি বাণিজ্যিক পরিসরে নানান ধরনের হাঁস-মুরগির খামার করতে পারেন । এবং তা বিভিন্ন পাইকারি বা খুচরা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতে পারেন ।

 

৪.সার , বীজ ও কীটনাশকের ব্যবসা:
গ্রামে যেহুতু প্রচুর জায়গা জমি রয়েছে সেহুতু মানুষজন সে জমিগুলোতে নানান ধরনের চাষাবাদ করে থাকে । আর এই চাষাবাদ কাজের জন্য বিভিন্ন কৃষি বা চাষের সম্পর্কিত পণ্যের প্রয়োজন হয় ।

জমিতে বারবার একই ফসল চাষের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় যার ফলে কৃষিবীদরা বিভিন্ন ধরনের সার ব্যবহার করতে বলেন । তাই আপনি গ্রামে একটি দোকান দিয়ে বিভিন্ন রকমের সার , বীজ ও কীটনাশক বিক্রি করতে পারেন ।

 

৫.মোবাইল মেরামতের দোকান:
বর্তমানে শহর – গ্রাম সকলেরই কাছে মোবইল রয়েছে । সবাই এখন পরিচিতদের সাথে মোবাইলফোনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করছে । মোবাইল ফোন যেহুতু একটি ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্ট তাই যেকোনো মুহুর্তেই এটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

তাই আপনি গ্রামেই একটি মোবাইল মেরামতে দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন এটি একটি লাভজনক গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া । তবে এই ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে মোবাইল মেরামতের কাজ শিখে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে ।

এরপর গ্রামের বাজার বা জমজমাট একটি স্থানে দোকান নিয়ে সেখানে মোবাইল মেরামত ও তার সম্পর্কিত উপরকরণ একসাথ করে ব্যবসায় শুরু করা যেতে পারে । মোবাইল মেরামতে পাশাপাশি মোবাইল রিচার্জ , টাকা ট্রান্সফার বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা , মোবাইল এক্সেসরিজও বিক্রি করা যেতে পারে ।

 

৬.চা-নাস্তার দোকান:
গ্রাম কিংবা শহর সবখানেই এই চা-নাস্তার দোকান খুবই জনপ্রিয় । গ্রামেই এইধরনের চা-নাস্তার দোকানে সারাক্ষণই মানুষজনের আড্ডা জমে থাকে । বিশেষকরে গ্রামে হাট-বাজার বা জনবহুল স্থানে একটি চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসায় শুরু করতে পারলে তা থেকে ব্যাপক লাভ করা সম্ভব ।

বিভিন্ন আইটেমের চা যেমন : রং চা,দুধ চা বিক্রির পাশাপাশি মুখরোচক নাস্তাও বিক্রি করা যেতে পারে । সকাল – সন্ধ্যা রুটি বা পরটা তৈরী করে বিক্রি করতে পারেন তাহলে দেখবেন দোকানে সবসময় জ্যাম লেগে থাকবে ।

তবে চা-নাস্তার দোকানে সবচেয়ে ঝামেলার হলো ভালো কারিগর জোগাড় করতে পারা । তাই ব্যবসায় শুরুর পূর্বে ২-৩জন কারিগরের সাথে কথা বলে চুক্তি করে নিন এবং তাদের সাথে সবসময় সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা করুন ।

এছাড়াও নিজেকেও চা-নাস্তা তৈরী করার কাজ সময়ের সাথে সাথে শিখে নিতে হবে । তাই সবকিছু যদি ভালোভাবে ম্যানেজ করা সম্ভব হয় তাহলে চা – নাস্তার দোকান করে মাসে লাখ টাকা উপার্জন করতে পারবেন ।

 

৭.গরু-ছাগল ও মহিষের খামার:
গরু-ছাগল ও মহিষের খামার করাও লাভজনক একটি গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া । কারণ গ্রামে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা রয়েছে এইধরনের খামার করার জন্য । পাশাপাশি গ্রামের মাঠে ঘাটে প্রচুর ঘাস রয়েছে যা এইসব প্রাণীদের খাওনো যাবে ।

এতে করে খাদ্য খরচ কমে আসবে এবং এগুলো পালন করে ভালো লাভবান হওয়া যাবে । ইতিমধ্যে দেশের মধ্যে লক্ষ লক্ষ ডেইরি ফার্ম গড়ে উঠেছে এবং তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ডেইরি ফার্ম হলো নাহার ডেইরি ফার্ম । যাদের বাষির্ক টার্ন ওভার প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০কোটি টাকা ।

তারা দৈনিক ৬০০০লিটার দুধ সংগ্রহ করে তাদের গরু খামার থেকে । এবং সে দুধ দিয়ে তারা নানান ধরনের মিষ্টি তৈরী করে বিক্রি করে । আপনি একটি খামার করে এই ধরনের উপায় অবলম্বন করে হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ব্যবসায়ী । নাহার ডেইরী ফার্ম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখুন ।

 

৮.মুদি দোকান:
মুদি দোকান হচ্ছে একটি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বিক্রির দোকান তাই এটি গ্রাম কিংবা শহর সকল স্থানেই জনপ্রিয় । বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী নিয়ে আপনিও আপনার গ্রামের বাজারে একটি মুদি দোকান দিতে পারেন ।

মাঝারি মানের একটি মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে কমপক্ষে ৫- ১০ লক্ষ টাকা পুজিঁর প্রয়োজন হবে । মুদি দোকানে কিছু চাহিদাযোগ্য পন্য হলো : চাল , ডাল, লবণ , চিনি , মুড়ি , মশলা ,আলু ,পেয়াজ ,আদা,রসুন,তেল,সিগারেট , সাবান ,পাওডার ইত্যাদি ।

তবে গ্রামে দোকান করার একটি খারাপ দিক হলো এখানে বাকিতে বাজার করতে চায় মানুষ । তাই চেষ্টা করবেন যতকম পারা যায় বাকিতে পন্য বিক্রি করতে । অতিরিক্ত বাকি দিয়ে মুদি ব্যবসা করলে পরবর্তীতে ব্যবসায় পরিচালনা করাই কষ্টকর হয়ে যাবে ।

তাই আপনার গ্রামে যদি ভালো কোনে মুদি দোকান না থাকে সেক্ষেত্রে একটি মুদি দোকান দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করতে পারেন ।

 

৯.কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র:
শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামের ছেলে মেয়েরাও কম্পিউটার শেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে । সবাই এখন ধীরেধীরে কম্পিউটারের গুরুত্ব বুঝতে পারছে তাই দিনদিন গ্রামেও এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

গ্রামের বাজারে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে কিছু কম্পিউটার সেটআপ করে সাথে একজন বা দুজন দক্ষ ট্রেইনার দ্বারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি পরিচালনা করা যেতে পারে । এটিও একটি লাভজনক গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া ।

শুরুর দিকে ছাত্রছাত্রী একটু কম হতে পারে জনপ্রিয়তার অভাবে তবে কোয়ালিটিফুল ট্রেনিং সার্ভিস পেলে অটোমেটিক গ্রামে মার্কেটিং হয়ে যাবে ।

 

১০.সেলাই বা টেইলারিং দোকান:
গ্রামের বাজারে বা জনবহুল স্থানে একটি টেইলারিং দোকান দিয়ে ব্যবসায় করাও আজকাল লাভজনক ব্যবসায় হয়ে উঠেছে । আমরা সবাই নিজেদের মতো করে কাপড় তৈরী করে নিতে চায় যার ফলে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন সেলাই বা টেইলারিং দোকানে ।

এছাড়াও কাপড় টাইট বা ছোটে করাসহ নানান সার্ভিস দিয়ে একটি টেইলারিং দোকান থেকে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে ।

ভালো সার্ভিস , ভালো ব্যবহার করতে পারলে দ্রুতই ব্যবসা বড় হয়ে যাবে । কারণ এইধরনের ব্যবসায় সার্ভিস কোয়ালিটিই হচ্ছে মেইন । টাকা একটু বেশি হলেও কাজ বা সার্ভিস যদি ভালো হয় কাস্টমার খুশি হবে । তাই সবসময় শতভাগ ভালো সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে ।

এছাড়াও মাঝেমাঝে ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে নতুন কাস্টমার ধরা যেতে পারে ।

 

শেষ কথা:
আমাদের আজকের গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন নাহ । এবং আপনার জানা গ্রামের ব্যবসার আইডিয়াটিও আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এতে করে উদোক্তা ভাইয়েরা উপকৃত হবে ।

এছাড়াও নিয়মিত নানানধরনের ব্যবসায়িক আইডিয়া পেতে চোখ রাখুন আমাদের সাইটে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *