একটা সময় ছিলো যখন মানুষ ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারতো না। কোন বাবা-মা ও চাইতেন না তাদের ছেলে-মেয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্যকিছু হোক। কারণ তখন মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে শুধুমাত্র এসব পেশায় বস্তা ভরে টাকা উপার্জন করা যায় এবং টাকার নদীতে গোসল করা যায়, সাঁতারও কাটা যায়। তাই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে না পারলে জীবন সম্পূর্ণ বৃথা। তারপর ধীরে ধীরে এ ধারণা ভাঙতে থাকে এবং ব্যবসায় শিক্ষাসহ অন্যান্য শিক্ষা জনপ্রিয়তা লাভ করে ।
BBA – বিবিএ কেন পড়বেন ?
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। একসময় এদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষি নির্ভর থাকায় শিল্প ও সেবা খাত ততটা গুরুত্ব পায় নি। সঙ্গত কারণেই ব্যবসায় শিক্ষা অতটা প্রসার লাভ করেনি। তখন এদেশের বেসরকারি খাতে যত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা প্রয়োজন হতো, তার অধিকাংশই বিদেশ থেকে কয়েকগুণ বেশি বেতন দিয়ে ভাড়া করে আনতে হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে কৃষি খাতের অবদান কমতে থাকে এবং শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বাড়তে শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ব্যবসায়/শিল্প খাতে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ব্যবস্থাপক ও নির্বাহীর চাহিদা বাড়তে থাকে।
১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রসাশন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) এমবিএ নামে একটি মাস্টার ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করে এবং দক্ষ ও চৌকস স্নাতকদের ব্যবসায়/শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করতে থাকে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব আধুনিক, স্মার্ট ও দক্ষ নির্বাহী, ম্যানেজারদের পেয়ে খুশি। কারণ বিদেশ থেকে একজন কর্মী ভাড়া করে আনতে যে খরচ হয় তার চাইতে অর্ধেক খরচেই দেশের স্নাতকদের নিয়োগ দেওয়া যায় ।
এমবিএ প্রোগ্রামটি যেহেতু শুধুমাত্র আই.বি.এ তেই প্রথম চালু হয় তাই এদেশে এর চাহিদা খুব বাড়তে থাকে। চাহিদা বাড়তে বাড়তে এক সময় তুঙ্গে ছিলো । এমনও শোনা যেতো যে বের হওয়ার আগেই এসব গ্রাজুয়েটদের চাকরি হয়ে যেতো। এর ঠিক ২৭ বছর পরে, আইবিএ ১৯৯৩ সালে বি.বি.এ প্রোগ্রাম চালু করে।
ক্রমাগত বাড়তি চাহিদার কারণে দেশজুড়ে সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বি.বি.এ, এম.বি.এ পড়ানোর জোয়ার শুরু হয়। দেশের ৪১টা সরকারি ও ৯০ টা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে পরিমাণে BBA Graduates বের হচ্ছে তাতে আমাদের আর আগের দিন নেই বরং অবস্থাটা অনেকটা মাছের বাজারের মতো দাঁড়িয়েছে এবং বাড়তি সরবরাহের কারণে এখন আর এসব ডিগ্রিধারীদের অতটা “Hot Cake” হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
তবে আশার কথা, বাংলাদেশের অর্থনীতি শিল্প ও সেবা খাত নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে কৃষি ১৪%, শিল্প ৩২.৭% এবং সেবা ৫৩.৭% আমাদের জিডিপিতে ভূমিকা রাখছে। তার মানে হচ্ছে প্রতিনিয়ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রসার হচ্ছে। প্রযুক্তির এ যুগে নতুন নতুন পণ্য ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ নির্বাহী ও ব্যবস্থাপক খুবই প্রয়োজন। তার মানে হচ্ছে, বিবিএর চাহিদা এখনও কমেনি, কমবেও না বরং বাড়তেই থাকবে। বিবিএ করা গ্রাজুয়েটরা Banking, Insurance, MNC, National company গুলোতে সবসময় অন্য স্নাতক অপেক্ষা অগ্রাধিকার পায় এবং ক্যারিয়ারে ভালো করে ।
এতক্ষণ তো নিজের ব্যবসায়/বেসরকারি চাকরির কথা বললাম; এবার একটু সরকারি চাকরিতে কী কী তুলনামূলক সুবিধা পাওয়া যাবে সেটা বলি। সরকারি চাকরি বিশেষ করে বিসিএসে ভাইভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাইভার উপর অনেকটা নির্ভর করে আপনি কোন ক্যাডার পাবেন ।
সাধারণত তুলনামূলক স্মার্ট ও ভাষাগত দক্ষতা সম্পন্ন মানুষেরা জনপ্রিয় ক্যাডারগুলোতে (ফরেন, পুলিশ ইত্যাদি) চাকরি পায়। ঠিক এ জায়গাটাতেই বিবিএ গ্রাজুয়েটরা বিশেষ সুবিধা পায়। কেননা বিবিএ তে পড়বেন আর স্মার্ট হবেন না এটা তো হতে পারেনা।
আমরা আই.বি.এতে চার বছরে আট সেমস্টিারে ৮০ টা প্রেজেন্টেশন দিয়েছি। প্রেজেন্টেশন দিতে দিতে আমাদের আত্মবিশ্বাস দারুণভাবে বেড়েছে। ফলে যেকোন জায়গায় সেটা ভাইভা হোক আর যাই হোক বাংলা/ইংরেজিতে কথা বলতে অধিকাংশের কোন সমস্যা হয়না।
সুতরাং আপনার যদি নিজের বিজনেস করার ইচ্ছা থাকে কিংবা দক্ষ ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী হওয়ার ইচ্ছা থাকে অথবা সরকারি চাকরিতে যাওয়ার লক্ষ্য থেকে থাকে তাহলে বি.বি.এ পড়তে এসে খুব একটা ভুল সিদ্ধান্ত হয়নি।
না, কিছু মানুষ উদ্যোক্তা হয়ে চায়। আপনার যদি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলেও বিবিএ করুন। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আপনাকে অনেকগুলো বিষয় জানতে হবে- ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, বীমা, হিসাববিজ্ঞান, আইন, মার্কেটিং ইত্যাদি। আর এগুলোর সব কিছুই আপনি বিবিএ করার মাধ্যমে জানতে/শিখতে পারবেন। বিবিএ আপনাকে ‘Jack of all trades’ হিসেবে গড়ে তুলবে।
উদ্যোক্তা হতে চান, ব্যবসা করুন কিংবা চাকরি করুন সবকিছুতেই বিবিএ আপনাকে সাহায্য করবে। সুতরাং বিবিএ স্টুডেন্ট হিসেবে আপনার ভবিষ্যত অনেক দিকেই প্রসারিত। এখন আপনার কাজ হচ্ছে এই সম্ভাবনাময় সাবজেক্টে পড়াশোনা করে সর্বোচ্চ আউটপুট বের করে আনা। সবাই তো বিবিএ করছে। কিন্তু সবাই কি সফল হচ্ছে? হচ্ছে না। আপনি যদি সফল হতে চান, তাহলে সফল হওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সুতরাং বিবিএ লাইফের সময়টুকু কাজে লাগান, নষ্ট করবেন না ।