ডিলারশিপ ব্যবসা কি ? ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া ২০২৩

বর্তমানে ডিলারশিপ ব্যবসায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । এখন ছোট বড় সকলে কম বেশি একটা না একটা ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া বের করছে এবং তা নিয়ে ব্যবসা করছে । কম ঝুকিঁপূর্ণ হওয়ায় এবং অধিক লাভবান একটি ব্যবসায় হওয়ায় ডিলারশিপ ব্যবসায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।

 

বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো কিভাবে একটি ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং কি কি কাগজপত্র , লাইসেন্স ও নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে এছাড়াও কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন হতে পারে একটি ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করতে ইত্যাদি ।

 

তাহলে চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের ডিলারশিপ ব্যবসার আদোপান্তো ।

ডিলারশিপ ব্যবসা কি ? ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া ২০২৩

 

ডিলারশিপ ব্যবসা কি ?
ডিলারশিপ ব্যবসায় বলতে মূলত বুঝায় কোনো একটি কোম্পানির হয়ে নিদিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলের প্রতিনিধি বা এজেন্ট হিসাবে সেখানে কাজ করা । অর্থ্যাৎ উৎপাদনকারীর পন্যগুলো বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের নিকট বিক্রি করা ।

এবং যে বা যিনি এই প্রতিনিধি বা এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন তাকে ডিলার বলা হয় । তিনি সে অঞ্চলে পন্য বিপণন , বন্টন ও বিতরণসহ সম্পর্কি যাবতীয় কাজ করে থাকেন । ডিলারশিপ ব্যবসায় অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় ঝুকিঁ যেমন কম বিপরীত লাভও বেশি ।

 

কিন্তু একটি ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করার পূর্বে বাজার বিশ্লেষণ , সঠিক প্ল্যানিং ও একটি ব্যবসায় পরিচালনা করার দক্ষতা থাকতে হবে । কোম্পানীর থেকে প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার পর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা আপনার নিকট দ্বাারস্থ হবে পন্য ক্রয় করার জন্য ।

এবং আপনি আপনার দক্ষতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে যতবেশি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন তত বেশি লাভ ও কমিশন পাবেন কোম্পানি থেকে ।

 

ডিলারশিপ ব্যবসার নিয়ম:
ডিলারশিপ ব্যবসায় অন্যান্য ব্যবসার মতো তেমন ঝুকিঁ না থাকলেও এতে কিছু নিয়মকানুন ও শর্ত রয়েছে যা আপনাকে মানতে হবে অন্যথায় এই ব্যবসায় করা সম্ভব নাহ ।

ডিলারশিপ ব্যবসায় করতে আপনার কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে যেমন :

 

➡️ সবার প্রথমে নিজের একটি স্থায়ী ব্যবসার স্থান দেখাতে হবে ।

➡️ ব্যবসার নামে নিজস্ব ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে ।

➡️ নিজের নামে বা ব্যবসার নামে একটা ব্যাংক হিসাব বা একাউন্ট থাকতে হবে ।

➡️ কোম্পানির সাথে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ।

 

মোটামুটি এইধরনের রিকুয়ারমেন্টগুলো কমবেশি সকল কোম্পানি শর্ত দিয়ে থাকে । তবে কোম্পানিবেধে শর্তের ভিন্নতা থাকতে পারে তাই যে কোম্পানির ডিলারশিপ নিবেন সিদান্ত নিয়েছেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেই ডিলারশিপ নিবেন ।

ডিলারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র
ডিলারশিপ ব্যবসায় চুক্তিপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । তাই চুক্তিপত্রে সই বা সাইন করার পূর্বে সকল বিষয় যাচাই বাছাই করেই চুক্তিবদ্ধ হবেন ।

 

একটা চুক্তিপত্রে যেসব বিষয়গুলো থাকতে পারে তার একটা ধারণা নিচে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো :

➡️ কি কি পন্য নিতে চান ।

➡️ কি পরিমাণ পণ্য নিতে চান ।

➡️ কোম্পানি কেমন বা কি পরিমাণ কমিশন দিবে ।

➡️ কোম্পানি কি পণ্য পরিবহন দিয়ে আপনার গোডাউনে পাঠাবে ? ইত্যাদি

 

এই ধরনের সকল কিচু সে চুক্তিপত্রে মেনশন করা থাকবে । তাই সকল শর্ত পড়ার পর যদি মনে করেন শর্তগুলো আপনার অনুকূলে রয়েছে এবং আপনি তা মেনে ব্যবসায় শুরু করতে পারবেন তবেই চুক্তিপত্রে সাইন করবেন । [ যদি কোম্পানি তাড়াহুড়া করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবেন নাহ কারণ তাড়াহুড়া শয়তানের কাজ ]

 

ডিলারশিপ ব্যবসায় পুজিঁ কেমন ?
সকল ব্যবসায় কমবেশি পুজিঁর প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি ডিলারশিপ ব্যবসায়ও পুুজিঁ প্রয়োজন । তবে ডিলারশিপ ব্যবসায় একটু ভিন্নতা রয়েছে যেমন : এই ব্যবসায় করতে ২ভাবে টাকা বিনিয়োগ করতে হয় ।

তারমধ্যে প্রথমটা হলো : সিকিউরিটি মানি ইনভেস্টমেন্ট এবং অন্যটা হলো প্রোডাক্টের খরচ ।

কোম্পানির কাছে সিকিউরিটি হিসাবে কিছু টাকা ডিপোজিট রাখাকেই মূলত সিকিউরিটি মানি ইনভেস্টমেন্ট বলে যা আপনি পরবর্তীতে ব্যবসায় ছাড়ার সময় বা মাঝপথে তুলে নিতে পারবেন ।

আর প্রোডাক্ট খরচ বলতে বোঝায় ব্যবসায় পরিচালনা করতে যেসকল প্রোডাক্ট ক্রয় করবেন তার খরচ । তবে এখানে একটি সুবিধা আছে তা হলো ডিলারশিপ ব্যবসায় একসাথে প্রোডাক্টের সকল টাকা পরিশোধ করতে হয় নাহ । আপনি প্রোডাক্ট ক্রয় করার পূর্বে অগ্রিম বা প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার সাথে সাথে কিছু টাকা দিলেন বাকিটুকু প্রোডাক্ট বিক্রি করেও পরিশোধ করতে পারবেন ।

এর কারণ হচ্ছে কোম্পানি আপনাকে বিশ্বাস করে । বিশ্বাস করারও কারণ আছে এবং তা হলো আপনি যে ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে টাকা ডিপোজিট করে রেখেছেন এটিই সে কারণ ।

 

কোন কোন ডিলারশিপ কোম্পানির ডিলার নিবেন ?
আপনি হয়তো ডিলারশিপ কোম্পানি বা ডিলারশিপ ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে গিয়েছেন এখন আপনি একটি ডিলারশিপ ব্যবসায় শুরু করতে চান । কিন্তু কীধরনের কোম্পানীর ডিলার নিয়ে ব্যবসা করবেন তার আইডিয়া খুজঁছেন । এমনটা যদি হয় তাহলে লেখাটি পড়তে থাকুন ।

 

১. সিগারেট কোম্পানির ডিলার:
সিগারেট অত্যন্ত চাহিদাযোগ্য একটি পণ্য যদি এটি নেশা জাতীয় পণ্য । কিন্তু আপনি চাইলে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানির ডিলারশিপ নিয়ে আপনার এরিয়ার ডিলার হয়ে সে পন্য সরবারহ করতে পারেন । একটি সিগারেট কোম্পানির ডিলারশিপ নিতে আপনার কমপক্ষে ৫-৭লক্ষ টাকা মূলধনের প্রয়োজন হতে পারে ।

২. ফ্রেশ কোম্পানির ডিলার:
ফ্রেশ হলো মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি একটি অঙ্গপ্রতিষ্টান । মেঘনা গ্রুপ বাংলাদেশের খুবই স্বনামধন্য একটি কোম্পানি । যার ফলে তাদের ফ্রেশ কোম্পানিতে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় শত শত প্রোডাক্ট । ফ্রেশ কোম্পানীর কিছু জনপ্রিয় পণ্য হলো : ফ্রেশ তেল , ময়দা , আঠা, মিনারেল পানি ,সুজি , চনাচুর – বিস্কুট ইত্যাদি ।

ফ্রেশ কোম্পানির ডিলার নেওয়ার পূর্বে খোজঁ নিয়ে দেখুন আপনার এলাকায় অন্য কেউ তাদের ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করছে কিনা । কারণ একই এরিয়াতে একের অধিক ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয় নাহ ।

৩.সফট ড্রিংকসের ডিলার:
বিভিন্ন তরল পানীয় কোম্পানীর ডিলারশিপ নিয়ে আপনি সফট ড্রিংকসের ডিলার ব্যবসা করতে পারেন । আমাদের বাংলাদেশে বছরের বেশিরভাগ সময় গরম থাকে যার ফলে এই ধরনের সফট ড্রিংকসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে ।

বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় সফট ড্রিংকস হলো : পেপসি , মোজো , টাইগার , পাওয়ার , সেভেনআপ ক্লেমন ইত্যাদি ।

৪.কসমেটিকসের ডিলার:
কসমেটিকস পণ্য সামগ্রীর ডিলারশিপ নেওয়ার মাধ্যমেও ডিলার ব্যবসা করতে পারেন । বর্তমানে সকলেই নিজেদের একটু সাজগোজঁ রাখতে চায় আর এর জন্য তারা ব্যবহার করে নানান ধরনের নামিদামী কসমেটিকস প্রোডাক্টস ।

বাজার বিশ্লেষণ করে আপনার চাহিদামতো একটি কসমেটিকস কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন ।

৫. স্টেশনারী পণ্যের ডিলার:
আপনার কাছে যদি তেমন বেশি পুজিঁ না থাকে কিন্তু আপনি ডিলারশিপ ব্যবসা করতে খুই ডেডিকেটেড তাহলে আপনার জন্য স্টেশনালী পণ্যের ডিলার খুবই র্কাযকরী হবে । আমাদের দেশের অর্ধেকের মতো সংখ্যা তরুণ শিক্ষার্থী যাদের এই স্টেশনারী পণ্যে চাহিদা রয়েছে ।

শিক্ষার্থী ছাড়াও অফিস আদালত , ও নানান ধরনের কর্মজীবীর মানুষের বিভিন্ন স্টেশনারী পণ্যের প্রয়োজন হয় । তাই আপনি নির্দিধায় এই স্টেশনারী পণ্য নিয়ে ডিলারশিপ ব্যবসায় শুরু করতে পারেন ।

 

পরিশেষে:
আজকের ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া আর্টিকেলটি যদি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি এখন ডিলারশিপ ব্যবসায় সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জানেন । যদি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার কোনো উপকারে এসে থাকে তাহলে তা নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *