রাঙ্গামাটি দেখার মত কি কি আছে

রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত, যা চট্টগ্রাম বিভাগের একটি পার্বত্য জেলা। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। রাঙ্গামাটির পূর্ব দিকে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে, এবং এটি কাপ্তাই লেকের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। রাঙ্গামাটি মূলত পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়, লেক, জলপ্রপাত এবং উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং জীবনধারার জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। ভ্রমণের জন্য রাঙ্গামাটি অন্যতম একটি স্থান। রাঙ্গামাটি দেখার মত কি কি আছে? এখানে কোণ স্থান টি ভ্রমণের জন্য সেরা এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

রাঙ্গামাটি দেখার মত কি কি আছে

এই অঞ্চল টি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। এর বিশাল কাপ্তাই লেক, যা কৃত্রিমভাবে কাপ্তাই বাঁধের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, এ অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ। লেকের চারপাশের সবুজ পাহাড়, ছোট ছোট দ্বীপ, এবং বোট ভ্রমণ রাঙ্গামাটিকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এখানে  বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী যেমন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদির নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য রয়েছে, যা এখানে আসা পর্যটকদের জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

এখানকার হস্তশিল্প, বিশেষ করে বাঁশ এবং বেতের তৈরি সামগ্রী, পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়। রাঙ্গামাটি বাংলাদেশে পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য, যেখানে প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়। এখানে ভ্রমণ করতে আসলে কয়েকটি বিশেষ স্থান ও অভিজ্ঞতা যা দেখা বা অনুভব করা উচিত তা নিচে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

কাপ্তাই লেক

কাপ্তাই লেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম লেক। এটি প্রায় ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং আশেপাশের সবুজ পাহাড় ও দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত। এই লেকটি তৈরি হয়েছিল কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের পর, যা কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দেওয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল। লেকে নৌকা ভ্রমণ করা রাঙ্গামাটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। লেকের মধ্যে বিভিন্ন ছোট দ্বীপ রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা ঘুরতে যেতে পারেন।

শুভলং জলপ্রপাত

শুভলং জলপ্রপাত রাঙ্গামাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলির একটি। কাপ্তাই লেকের পাশেই অবস্থিত এই জলপ্রপাত বর্ষার মৌসুমে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যখন জলপ্রপাতের জলের প্রবাহ বেশ শক্তিশালী থাকে। পর্যটকরা নৌকায় করে শুভলংয়ে আসতে পারেন এবং আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

ঝুলন্ত সেতু

রাঙ্গামাটির অন্যতম প্রতীকী স্থাপনা হল ঝুলন্ত সেতু। এটি কাপ্তাই লেকের উপর নির্মিত একটি সেতু, যা সারা বছর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। সেতুটি লেক এবং আশপাশের সবুজ পাহাড়ের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগের সুযোগ দেয়। এই সেতুটি মূলত পর্যটকদের জন্য নির্মিত এবং এটি রাঙ্গামাটির একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়।

রাজবন বিহার

রাজবন বিহার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রধান ধর্মীয় স্থান। এটি রাঙ্গামাটির একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির, যেখানে প্রতিদিন অনেক ভক্ত প্রার্থনা করতে আসেন। বিহারটি একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবস্থিত এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ধ্যানের জন্য উপযুক্ত স্থান। বিহারের আশেপাশে বুদ্ধের মূর্তি এবং মনোরম উদ্যান রয়েছে।

পদ্মপুকুর (পদ্মবিল)

পদ্মপুকুর একটি প্রাকৃতিক পদ্মফুলের বিল, যেখানে বর্ষাকালে পদ্মফুল ফোটে। এটি রাঙ্গামাটির একটি আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক স্থান, যেখানে পর্যটকরা পুকুরের পানি ও আশেপাশের সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন। বর্ষাকালে এই পদ্মফুলের সৌন্দর্য অবর্ণনীয় হয়।

পলওয়েল পার্ক এবং রিসোর্ট

পলওয়েল পার্ক রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত একটি সুন্দর পার্ক এবং রিসোর্ট এলাকা। এটি কাপ্তাই লেকের পাশে স্থাপিত এবং পর্যটকদের জন্য অবসর সময় কাটানোর চমৎকার স্থান। এখানে লেকের দৃশ্য, পার্কের সবুজ পরিবেশ, এবং রিসোর্টের সুবিধা পর্যটকদের আরামদায়ক ও উপভোগ্য করে তোলে।

সাজেক ভ্যালি

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্যালি সহজেই দেখা যায় এবং এটি রাঙ্গামাটির পর্যটন মানচিত্রে এক বিশেষ স্থান হিসেবে জনপ্রিয়। সাজেকের উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট, এবং এখানে থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। সাজেক মূলত পাহাড়ি এলাকার মধ্যে অবস্থিত এবং এখানকার মেঘের মধ্যে দিয়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা সত্যিই মনে রাখার মতো।

বাগাইছড়ি এবং রুইলুইপাড়া

বাগাইছড়ি এবং রুইলুইপাড়া পাহাড়ি উপজাতিদের গ্রাম এবং এখানকার উপজাতীয় জীবনধারা সম্পর্কে জানার ভালো সুযোগ দেয়। এই গ্রামগুলোতে গেলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি, ঘরবাড়ি এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়। এখানে বসবাসরত চাকমা, মারমা, এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব জীবনধারা এবং ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে আছেন।

পবিত্র মনাস্ট্রি এবং আশ্রম

রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন বৌদ্ধ মনাস্ট্রি এবং আশ্রম রয়েছে। এসব স্থানে বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা করা হয় এবং অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে আসে ধ্যান এবং প্রার্থনার জন্য। রাজবন বিহার ছাড়াও, এখানে বেশ কিছু পবিত্র স্থান রয়েছে যা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শান্তির জন্য বিখ্যাত।

চিংড়িখাল

চিংড়িখাল একটি ছোট নদী, যা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি অঞ্চলে প্রবাহিত। এর আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং লেকের সংযোগ পর্যটকদের জন্য একটি আনন্দদায়ক ভ্রমণ স্থান। পর্যটকরা এখানে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন এবং নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

নানিয়াচর

নানিয়াচর রাঙ্গামাটির একটি অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কেন্দ্র এবং এখানকার বাজার এবং হস্তশিল্পের পণ্য দেখার মতো।

আদিবাসীদের মেলা এবং উৎসব

রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন সময়ে আদিবাসী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, বিশেষ করে বিজু, ওয়াংগালা ইত্যাদি উৎসব। এসব উৎসবে পর্যটকরা আদিবাসী সংস্কৃতির সাথে মিশে যেতে পারেন এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, গান, এবং পোশাক দেখতে পারেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের শুধু রাঙ্গামাটি ভ্রমণেই করে অধিক স্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন। এখানকার অন্যতম একটি ভ্রমনিয় স্থান হলো সাজেক ভ্যালি, যাকে মেঘের রাজ্য বলা হয়। এছাড়া রাঙ্গামাটি ভ্রমণের মাধ্যমে পাহাড়ের মনোরম পরিবেশ ও এখানে বসবাসরত মানুষের দৈনিক জীবন সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। রাঙ্গামাটিতে আসলে অবহসই এই স্থান গুলোর যেকোনো একটি হলেও ভ্রমণ করতে পারেন।

আরও দেখুনঃ

হালিশহর দর্শনীয় স্থান

চট্টগ্রামের পার্ক কোথায় [লোকেশন]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *