বাহাদুর শাহ পার্ক, বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পুরানো অংশে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এই পার্ক নির্মিত হয়, যেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম গণবিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। এই বিদ্রোহের সময় বহু ভারতীয় সৈনিক ও বাঙালি বিদ্রোহী প্রাণ হারিয়েছিলেন, আর তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এ স্থানটি পরবর্তীতে একটি উদ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই পার্ক টি একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে আসার পূর্বে বাহাদুর শাহ পার্ক কোথায় অবস্থিত? কিভাবে যাবেন ও এখানে কি কি আছে? এই বিষয়ে জেনেনিন।
বাহাদুর শাহ পার্ক
বাহাদুর শাহ পার্ক, যা ঢাকার পুরান অংশে অবস্থিত, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ এবং ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত। এ পার্কটি মূলত ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিরক্ষার্থে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রথম বৃহৎ সামরিক বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত। বিদ্রোহের সময় এই এলাকাটিই ছিল বিদ্রোহীদের অন্যতম সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু। সেই সময় বহু সিপাহী ও স্থানীয় বিদ্রোহী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন, এবং তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড এই স্থানেই কার্যকর করা হয়।
পার্কটির মূলত নাম ছিল ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’, যা ব্রিটিশ শাসনের প্রেক্ষিতে দেওয়া হয়েছিল। তবে ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তানের শাসনামলে পার্কটির নাম পরিবর্তিত হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক হয়, যা শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নামে নামকরণ করা হয়, যিনি সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের মনোবল বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বাহাদুর শাহ পার্কের মধ্যে বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্মারক স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো বিদ্রোহের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রতীক। পার্কের কেন্দ্রস্থলে একটি বিশালাকার স্তম্ভ রয়েছে, যা বিদ্রোহের শহীদদের স্মরণে নির্মিত। পার্কটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত।
বাহাদুর শাহ পার্ক কোথায় অবস্থিত
এই পার্ক পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত। এটি ঢাকার প্রাচীন অংশে, শহীদনগর, লালবাগ, এবং চকবাজারের পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। পার্কটি মূলত পুরান ঢাকার জনবহুল ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত, যা একে সহজলভ্য এবং স্থানীয়দের জন্য অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।
ঠিকানা:
বাহাদুর শাহ পার্ক
স্থান সদরঘাটের কাছে, বংশাল রোড
এলাকা: সদরঘাট, ঢাকা-১১০০, বাংলাদেশ
পার্কটি সদরঘাট নৌবন্দর থেকে হাঁটার দূরত্বে, এবং চকবাজার ও লালবাগের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোর সন্নিকটে।
বাহাদুর শাহ পার্কে কি কি আছে?
বাহাদুর শাহ পার্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ ও স্থাপত্যের পাশাপাশি কিছু আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যা স্থানটিকে ঐতিহাসিক এবং সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এখানে সিপাহী বিদ্রোহের শহীদদের স্মরণে তৈরি বিভিন্ন স্মারক, উন্মুক্ত স্থল, এবং জনসাধারণের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:
১. স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মারক:
বাহাদুর শাহ পার্কের প্রধান আকর্ষণ হল এখানকার বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ, যা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিকে ধরে রাখে।
২. উন্মুক্ত স্থান ও সবুজ এলাকা:
বাহাদুর শাহ পার্কে বেশ বড় উন্মুক্ত স্থান রয়েছে, যেখানে শহরের কোলাহল থেকে মুক্তির স্বাদ পাওয়া যায়।
৩. পুকুর ও জলাধার:
পার্কের ভেতরে একটি ছোট পুকুর রয়েছে, যা স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এটি পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। পুকুরের চারপাশে বেঞ্চ এবং হাঁটার পথ রয়েছে, যেখানে মানুষজন এসে প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে পারেন।
৪. হাঁটার পথ ও বিশ্রামের স্থান:
বাহাদুর শাহ পার্কে বেশ কিছু সুসজ্জিত হাঁটার পথ আছে, যা পার্কটিকে ঘিরে রেখেছে। এখানে মানুষের চলাচল সহজ করার জন্য পথ তৈরি করা হয়েছে।
৫. শিশুপার্ক ও বিনোদনের স্থান:
বর্তমানে বাহাদুর শাহ পার্কে ছোট একটি বিনোদন এলাকা রয়েছে, যেখানে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে।
৬. ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ভূমিকা:
বাহাদুর শাহ পার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। প্রতি বছর এখানে বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক ও স্বাধীনতা সম্পর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
৭. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
বাহাদুর শাহ পার্কে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এই পার্কটি ঐতিহ্যের কারণে পরিচিত। এখানে শিশুদের জন্য বিশেষ কিছুই নেই। বড়দের জন্যই বিনোদনমূলক তেমন কোনো কিছু পাওয়া যাবে না। এটি একটি সাধারণ মানের পার্ক। সুযোগ পেলে এই পার্কটি ভ্রমণ করতে পারেন। বাংলা বাজার, ইসলামপুর, শাখারী বাজারের মত ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা থেকে বর্তমান ঢাকার নতুন এলাকায় আসতে এ পার্ক এলাকার রাস্তাটিই প্রধান সড়ক।
আরও দেখুনঃ
বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত
তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক
আমি সুজন। আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি ঢাকা পলিটেকনিকে পড়ালেখা করছি। আমার পড়া লেখার পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।