এই পোস্টে বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর দেওয়া আছে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। গতানুগতিক জীবনধারার মধ্যে নববর্ষ নিয়ে আসে নতুন সুর, নতুন উদ্দীপনা। পুরোনো দিনের গ্লানি জরাকে মুছে দিয়ে একরাশ হাসি, আনন্দ আর গান দিয়ে ভুলিয়ে দিয়ে যায় নববর্ষ। প্রাচীনকাল থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এটি বাঙালির আনন্দময় উৎসব হিসেবে সুপরিচিত। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালির জাতীয় উৎসব।
বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল ১ঃ
নিশি অবসান ঐ পুরাতন বর্ষ হও গত
বন্ধু হও শত্রু হও যেখানে যে রহ
ক্ষমা করিও আজিকার মতাে
পুরাতন বর্ষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত
ক. বাংলা নববর্ষের প্রধান অনুষ্ঠানের নাম কী?
খ. বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব’- কেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবার্থ বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. “উদ্দীপকটি বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাব ধারণা করে।”— বিশ্লেষণ করাে।
সৃজনশীল ২ঃ
পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালির এক অনন্য উৎসব, আর অন্যতম জাতীয় উৎসব। এর ঐতিহা সুপ্রাচীন ও গৌরবমণ্ডিত। অবশ্য কালের যাত্রাপথ ধরে এর উদযাপন রীতিতে নানা পালাবদল ঘটেছে, বিভিন্ন সময়ে তা বিভিন্ন মাত্রিকতা অর্জন করেছে। সুদূর অতীতে এর সঙ্গে কৃষি সমাজের যােগসূত্র ছিল অবিচ্ছেদ্য।
ক. আধুনিককালে নব আঙ্গিকের বর্ষবরণ উৎসবের সূচনা হয় কাদের উদ্যোগে?
খ. নববর্ষের উৎসব কীভাবে দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে?
গ। “সুদূর অতীতে এর সঙ্গে কৃষি সমাজের যােগসূত্র ছিল অবিচ্ছেদ্য।” -উদ্দীপকের এই লাইনের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে সাদৃশ্যের জায়গাগুলাে কোথায়? উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকটি বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র চেতনাকে ধারণ করতে পেরেছে কি? তােমার মতামতের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের সৃজনশীল পপ্রশ্নের উত্তর
উত্তর ১ঃ
ক। বাংলা নববর্ষের প্রধান অনুষ্ঠানের নাম বৈশাখী মেলা।
খ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বলেই বাংলা নববর্ষকে আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব বলা হয়েছে।পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান বন্ধ করে আমাদের মননে ও সংস্কৃতিতে চরমভাবে আঘাত হানে। তারা এ উৎসবকে নস্যাৎ করতে সবরকম অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু বাঙালি এর প্রতিবাদে সােচ্চার হয়ে ওঠে। কারণ নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে বাংলা নববর্ষকে আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব বলা হয়েছে।
গ।
উদ্দীপকের ভাবার্থ বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উল্লেখিত নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাঙালির প্রত্যাশার দিকটিকে নির্দেশ করে।
বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলােচনা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আলােচ্য প্রবন্ধটিতে তিনি নববর্ষ উদযাপনের ক্ষেত্রে দেশবাসীর ধারণা ও প্রত্যাশার দিকটি তুলে ধরেছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে পুরােনাে বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানাে হয়েছে। কবির প্রত্যাশা, এর মধ্য দিয়ে বিগত দিনের সব পাপ, তাপ, দুঃখ-যন্ত্রণা বিদূরিত হয়ে নতুন দিনের আগমন ঘটবে। আলােচ্য কবিতাংশে নববর্ষকে কেন্দ্র করে ফুটে ওঠা কবির এই প্রত্যাশার দিকটি বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধেও পরিলক্ষিত হয়। প্রাবন্ধিক সেখানে নতুন বছর বরুণ করে নেওয়াকে কেন্দ্র করে বাঙালিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত অভিন্ন ধারণা এবং প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন, যা উদ্দীপকের মূলভাবকেই তুলে ধরে। সে বিবেচনায়, উদ্দীপকের ভাবার্থ আলােচ্য প্রবন্ধের নববর্ষ উদযাপন নিয়ে বাঙালির প্রত্যাশার দিকটিকেই নির্দেশ করে।
ঘ।
উদ্দীপকটি বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাব, ধারণ করে না।”- মন্তব্যটি যথার্থ বলেই আমি মনে করি।
বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বাংলা নববর্ষের সামগ্রিক ইতিহাস পর্যালােচনা করেছেন। আর তা করতে গিয়ে তিনি দেশবাসীর নববর্ষ সম্পর্কিত ধারণা, নানান আনুষ্ঠানিকতাসহ বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাসকে যুক্ত করে এর প্রভাব বর্ণনা করেছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে পুরােনাে বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। নিজের ভুল স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন বছর শুরু করার প্রত্যয় ফুটে উঠেছে সেখানে কবির প্রত্যাশা, নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন দিনের সূচনা হবে। আলােচ্য প্রবন্ধে এ বিষয়টি প্রতিফলিত হলেও এটিই প্রবন্ধটির একমাত্র বিষয় নয়।
বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে নববর্ষ উদযাপনের একটি সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রাবন্ধিক সেখানে নববর্ষকে ঘিরে বাঙালির প্রত্যাশা এবং নানান আনুষ্ঠানিকতার বর্ণনা দিয়েছেন। আলােচ্য প্রবন্ধে নববর্ষকে কেন্দ্র করে ফুটে ওঠা এই ধারণা এবং প্রত্যাশার দিকটি উদ্দীপকের কবিতাংশেও পরিলক্ষিত হয়। তবে এ ছাড়াও প্রবন্ধটিতে নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস এবং বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে এর যােগসূত্রের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে এসব বিষয় উত্থাপিত হয়নি। সেদিক বিবেচনায়, প্রশ্নোত্ত উক্তিটি যথার্থ।
উত্তর ২ঃ
ক। আধুনিককালে নব আঙ্গিকের বর্ষবরণ উৎসবের সূচনা হয় কলকাতার ঠাকুর পরিবারে এবং শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে।
খ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে নববর্ষের উৎসব দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী এদেশে বাংলা নববর্ষ উৎসব বন্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু বাঙালি এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তারা নববর্ষ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং জাতিসত্তা গঠনের প্রয়াসে ঐক্যবদ্ধ হয়। এভাবে সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ধীরে ধীরে দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
গ।
প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি বাংলা নববর্ষের প্রাচীন উদযাপন রীতির দিককে ইঙ্গিত করে, যা আলােচ্য প্রবন্ধের বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজের নববর্ষ উদযাপনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাঙালির অন্যতম জাতীয় উৎসব বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় কৃষিভিত্তিক সমাজকে কেন্দ্র করে নববর্ষের উৎসব অনুষ্ঠিত হতাে। সে সময় পুণ্যাহ, হালখাতা, আমানি প্রভৃতি আচার অনুষ্ঠান পালিত হতাে। কৃষকরা নিজেদের মতাে করে নববর্ষের উৎসবে শামিল হতাে। কোনাে কোনাে এলাকায় অনুষ্ঠিত হতাে বৈশাখী মেলা। এছাড়া নানারকম আঞ্চলিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান পালিত হতাে বিভিন্ন এলাকায়। কৃষি ও কৃষককে কেন্দ্র করে নববর্ষ উদযাপিত হলেও কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই অনুষ্ঠান বর্তমান রূপ পেয়েছে।
উদ্দীপকে সুদূর অতীতে বাংলা নববর্ষের সাথে কৃষি সমাজের যােগসূত্রের কথা বলা হয়েছে। এদেশে কৃষিভিত্তিক সমাজ থাকার কারণে কৃষকেরাই ছিল এই উৎসবের মূলে। কালের পরিক্রমায় সভ্যতার উন্নতির ফলে নববর্ষ উৎসব আধুনিক রূপ লাভ করেছে। বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধেও কৃষি সমাজের নববর্ষ উৎসবের ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে। প্রবন্ধে বর্ণিত পুণ্যাহ, হালখাতাসহ নানারকম আলিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের দিকগুলাে প্রশ্নোত্ত লাইনের প্রেক্ষিতে তাই সাদৃশ্যময়।
ঘ।
উদ্দীপকে বাংলা নববর্ষের বিবর্তনের ঐতিহা তুলে ধরা হলেও আলােচ্য প্রবন্ধের বাঙালি জাতীয়তাবাদ গঠনের দিকটি ফুটে না ওঠায় উদ্দীপকটি প্রবন্ধের সমগ্র চেতনাকে ধারণ করতে পারেনি।
বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নববর্ষ উৎসবের প্রভাবের দিকটি বর্ণিত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার পেছনে নববর্ষের প্রেরণা কীভাবে কাজ করেছে, তা লেখক তুলে ধরেছেন। এছাড়াও প্রাচীনকাল থেকে বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হওয়ার দিকটিও প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে। প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজে পয়লা বৈশাখ যে উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হতাে সেখান থেকে বর্তমান অবস্থানে আসার প্রেক্ষাপটও এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
উদ্দীপকে বাঙালির অনন্য জাতীয় উৎসব পয়লা বৈশাখের কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন এই উৎসবের গৌরব ও ঐতিহাের কথা বলতে গিয়ে কৃষি সমাজের সঙ্গে এর যােগসূত্রের কথাও বর্ণিত হয়েছে উদ্দীপকে। এই উৎসব সময়ের আবর্তনে নানা মাত্রিকতা লাভ করে বাঙালির জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। নববর্ষের এই বিবর্তন ও ঐতিহ্যের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকে।
বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে নববর্ষ উৎসবের উৎপত্তি ও বিকাশের পাশাপাশি বাঙালি জাতীয়তাবাদ সৃষ্টিতে এর ভূমিকার কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে এই সমগ্র বিষয় প্রকাশ পায়নি। সেখানে কেবল নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথাই ফুটে উঠেছে। ফলে উদ্দীপকে পয়লা বৈশাখের জাতীয়তাবাদী চেতনার কথা অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র চেতনাকে ধারণ করতে পারেনি।
শেষ কথা
আশা করছি এই পোস্ট আপনাদের ভালোলেগেছে এবং এখান থেকে সুখী মানুষ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ পেরেছেন। এই রকম শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য পেতে আমার সাথেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে শিক্ষামূলক পোস্ট শেয়ার করা হয়।
আরও দেখুনঃ
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর